অপারেটিং সিস্টেম – লিনাক্স (তৃতীয় পর্ব)

লিনাক্স নিয়ে প্রথম পর্বে আমি বলেছিলামঃ

লিনাক্স – এর উপর নির্ভর করে যেসব অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে (যেমন – উবুন্টু, অ্যান্ড্রোয়েড, রেডহ্যাট প্রভৃতি) তাদেরকে বলা হয় ‘লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন’ বা, সংক্ষেপে ‘লিনাক্স ডিস্ট্রো’। অনেক আলাদা আলাদা লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন রয়েছে, ডিস্ট্রোগুলো একে অপরের থেকে আলাদা হলেও প্রত্যেকের মধ্যে একটি কমন ব্যাপার হয়েছে আর তা হচ্ছে ‘লিনাক্স কার্নেল’!

আজ আমি বহুল ব্যবহৃত কিছু লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে কথা বলবো, ঈন শা আল্লাহ।

বহুল ব্যবহৃত লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন (লিনাক্স ডিস্ট্রো):

ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন ধরণের লিনাক্স ডিস্ট্রো রয়েছে। ক্যাটাগরী আকারে প্রকাশ না করে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় কিছু লিনাক্স ডিস্ট্রো সম্পর্কে বলা হলো –

উবুন্টুঃ সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিস্ট্রোর মধ্যে একটি। যারা নতুন লিনাক্স ব্যবহার শুরু করবেন ভাবছেন তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ডিস্ট্রো হচ্ছে উবুন্টু। এটি ব্যবহার করা অনেক বেশি সহজ এবং প্রায় সবরকম কাজ স্বাচ্ছন্দেই করা যায়।

ডেবিয়ানঃ শুধু ডেবিয়ানের উপর ভিত্তি করে ১৩৮ টিরও বেশী ডিস্ট্রো রয়েছে। আমরা যেই উবুন্টুকে আজ চিনি সেটির DNA হচ্ছে ডেবিয়ান। স্টেবল আর সিকিউরিটির দিক থেকে ডেবিয়ান বরাবরই অনেক বেশী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে লিনাক্স জগতে। নতুনদের জন্য খাপ খেয়ে নিতে ভালোই সময় লাগবে ডেবিয়ানে।

আর্চ লিনাক্সঃ ইউজার ফ্রেন্ডলি ও কাস্টমাইজেশন এর জন্য সুপরিচিত। যদি দীর্ঘসময় ধরে লিনাক্স ব্যবহার করার মন-মানসিকতা থাকে, তাহলে আর্চ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে নতুনদের জন্য আর্চ লিনাক্স দিয়ে লিনাক্স যাত্রা শুরু না করাটাই ভালো।

ওপেনসুসেঃ ডেভেলপার ও সিস্টেম এডমিনদের জন্য অধিক পছন্দের ডিস্ট্রো হচ্ছে এটি। দেখতে সুন্দর, সাজানো গোছানো এই ডিস্ট্রোটিকে কেউ চাইলে নিজের মতো করে একটি ভার্শন তৈরী করতে পারবে।

ফেডোরাঃ ডেভেলপারদের পছন্দ ও রেডহ্যাট লিনাক্সের কমিউনিটি নিয়ন্ত্রিত ডিস্ট্রো হচ্ছে ফেডোরা। লিনাক্স কার্ণেলের উদ্ভাবক “লিনুস টরভালস” এর পছন্দের ডিস্ট্রো এটি।

 

লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন (লিনাক্স ডিস্ট্রো) ব্যবহারের সুবিধাঃ

১। ফ্রি ও ওপেন সোর্স, এটি যেকোনো ডিভাইসে ব্যবহার করতে কাউকে মূল্য পরিশোধ করতে হয়না।

২। একটি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে যে ধরণের সফটওয়্যার থাকা প্রয়োজন তার সবটাই লিনাক্স ডিস্ট্রোতে দেওয়া থাকে। যেমনঃ ওয়েব ব্রাউজার, মিডিয়া প্লেয়ার, ফাইল ম্যানেজার সহ অন্যান্য।

৩। লিনাক্সে রয়েছে সবচেয়ে শক্তিশালী ম্যালওয়্যার থেকে সংরক্ষণ ব্যবস্থা, যার কারণে কোনো এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়না।

৪। ডেভেলপাররা আমাদের থেকে বেশী নিজেদের প্রাইভেসী নিয়ে সচেতন তাই তারা এটি এমন ভাবে তৈরী করেছে যাতে আমাদের কোনো হ্যাকারের কবলে পড়তে না হয়।

৫। লিনাক্সের যেকোনো ডিস্ট্রোই হার্ডওয়্যারের রিসোর্স অনেক কম পরিমাণে ব্যবহার করে থাকে, যার ফলে অনেক পুরাতন বা নূন্যতম কনফিগারেশনের পিসিতেও এটি দুর্দান্ত কাজ করে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন রকম লাইটওয়েট (হালকা) ডিস্ট্রো তো আছেই।

৬। লিনাক্স ভিত্তিক প্রতিটি ডিস্ট্রোর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা কমিউনিটি, যেখানে সবরকম সমস্যার সমাধান ইতিমধ্যেই রয়েছে। কমিউনিটি সাপোর্টের জন্য অধিকাংশ ডিস্ট্রোই অনেক কম সময়ে মানুষের ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে।

৭। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ডেভেলপারদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে লিনাক্স ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার গুলো তৈরী হচ্ছে। তার মানে লিনাক্স আমাদের জন্য এবং আমাদের দ্বারাই তৈরী হচ্ছে, এর থেকে বড় সুবিধা আর কি হতে পারে!

 

কিছু ভূল ধারণাঃ

অনেকেই মনে করে যে, লিনাক্স ব্যবহার করতে হলে কম্পিউটারে অনেক বেশী দক্ষতার প্রয়োজন হয় বা প্রোগ্রামিং জানতে হয় অথবা এটি অনেক জটিল কিছু ইত্যাদি।

এটি সম্পূর্ণ নিজের তৈরীকৃত ভ্রান্ত ধারণা।

যেকোনো বয়সের যেকোনো মানুষই লিনাক্স ব্যবহার করতে পারে এর জন্য উচ্চমানের প্রযুক্তি দক্ষতার প্রয়োজন হয়না।

একদল মানুষ এখনো মনে করেন যে, লিনাক্স ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র হ্যাকিং এর জন্য অথবা যে লিনাক্স ব্যবহার করে সে একজন হ্যাকার! আমার মতে এটিও পুরোপুরি সঠিক ধারণা নয়।

(ঈষৎ সংগৃহীত ও পরিমার্জিত)

[চলবে…………..]


সিয়াম মাহমুদ চৌধুরী।
ছোটো-খাটো একজন প্রোগ্রামার এবং সাইবার সিকিউরিটির একজন ক্ষুদ্র ছাত্র।

Leave a comment

Start a Blog at WordPress.com.

Up ↑

Design a site like this with WordPress.com
Get started